এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-বৈষম্য দূরীকরণ এখন সময়ের দাবি
গাজীপুর টাইমসঃ জাতীয় বেতন স্কেল বা ৮ম পে স্কেল বাস্তবায়ন হয়েছিল সেই ২০১৫ সালে। তৎকালীন বাজার দর, জীবন যাত্রার মান কিংবা লিভিং কসট অনুযায়ী সেই নতুন বেতন কাঠামো ঠিক ছিলো। কিন্তু বর্তমান দ্রব্যমূল্যের আকাশচুম্বি আস্ফালন, চড়া মূল্যস্ফীতি, শিক্ষা-চিকিৎসা-বাসস্থান-পোশাকের খরচ সংকুলান করে মাসের শেষাংশে হিমশিম খেতে হয় প্রায় অধিকাংশ বেসরকারি চাকুরীজীবীদেরকেই। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবস্থা আরও খারাপ, ধার-দেনা, ঋণের বোঝা নেই এমন মানুষের সংখ্যা হাতেগোনা।
শিক্ষকদেরকে এদেশে মৌখিকভাবে বিরাট সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর, জাতিগঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য, শিক্ষকতা মহান পেশা, এমন কতো কী কথা প্রচলিত রয়েছে সমাজে শিক্ষকদেরকে নিয়ে তার ইয়ত্তা নেই।
কিন্তু সমাজের নীতি নির্ধারকরা কেউ একটিবারও ভাবেন না যে শিক্ষকদের কেবল সম্মান দিয়েই পেট ভরে না, তারা সমাজের সবচেয়ে নিরীহ সম্প্রদায়। প্রতি মাসের ২০ তারিখের পরে যখন তাদের পকেট শূন্য হয়ে যায়, তখন টাকার জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে হয়, ঋণের সুদের চক্রে পড়ে তাদের মানসিক শক্তি কমে যায়। মনোবল ভেঙে যাওয়া শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে তখন ভাঙা মন নিয়ে কিভাবে সুকান্ত-নজরুল-শেলী পড়াবেন সেকথা কেউ বিবেচনা করেন না।
শিক্ষকদের প্রফুল্ল মনে ক্লাসে যাওয়া উচিত, তাই চিত্তবিনোদনের জন্য তাদের সাগর-পাহাড় অথবা প্রকৃতির কাছে ঘুরতে যাওয়া অত্যাবশকীয়, অথচ বর্তমান পকেটের অবস্থা বিবেচনা করে ঘুরতে যাওয়া বিলাসিতা মনে হয়। নিত্য প্রয়োজন মিটাতে যেখানে নাভিশ্বাস উঠে যায়, চিত্তবিনোদনপূর্বক মুক্ত চিন্তা করা সেখানে অবিশ্বাস্য।
এমতাবস্থায় একমাত্র নবম পে স্কেলই পারে এই বৃহৎ পেশাজীবীদের মনে শান্তি ও স্থিরতা ফিরিয়ে দিতে।
ঢাকা তো এখন প্রকারান্তরে আন্দোলনের শহর, যার যে চাহিদা সে অনুযায়ী তারা আন্দোলন করছে, রাস্তায় শ্লোগান-মিছিল-অবরোধ করছে, তাতে কাজ না হলে সোজা সচিবালয়ে ঢুকে যাচ্ছে, অনধিকারচর্চা করছে এবং দাবি-দাওয়া আদায়ে বেশিরভাগই নিয়মিত সফল হচ্ছে, আবার কেউ কেউ সফল হওয়ার আশ্বাস নিয়ে ফিরে আসছে।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এদিকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকমণ্ডলী বারকয়েক হরেকরকম ইস্যু নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন বটে কিন্তু তারা সাফল্যের মুখ দেখতে পারেন নি। আন্দোলনে অসফল হওয়া বা তাদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণের আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে:
প্রথমত, শিক্ষকদের চাহিদা ছিলো নানামুখী, যেমন: বদলি, জাতীয়করণ-৯ম পে স্কেল। আসলে আন্দোলনটাকে তারা এক সুতোয় গাঁথতে পারেননি।
দ্বিতীয়ত, বৈষম্য দূরীকরণে শিক্ষকরা স্বতঃস্ফূর্ত ছিলো ঠিকই কিন্তু সক্রিয় ছিলো না, আন্দোলনে শিক্ষকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিলো না।
তৃতীয়, কেন্দ্রীয় শিক্ষকনেতাদের বিচক্ষণতার দারুণ অভাব। আন্দোলনে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ তারা নিশ্চিত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন।
কেন্দ্রীয় শিক্ষক নেতাদের উচিত সারাদেশের বিভাগীয়-জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাথে চূড়ান্ত আন্দোলনের আগেই নির্বাচিত এজেন্ডাভিত্তিক বৈঠক করা, এবং আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঠিক করা, অত:পর অধিকাংশ শিক্ষকদের অংশগ্রহণে আন্দোলন সঠিকভাবে পরিচালনা করা। তবেই বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-বৈষম্য দূর হবে।
সরকারের উচিত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা, কোনো গোষ্ঠীর জন্য আলাদা আলাদা দাবি পূরণ নয়, সামগ্রিকভাবে প্রয়োজনীয়তা এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটলেই বরং সার্বিক শৃঙ্খলা টিকিয়ে রেখে একটা সুন্দর সমাপ্তি টানা সম্ভব।
অমিতাভ হালদার
প্রভাষক ও শিক্ষক প্রতিনিধি
আলিম মাদরাসা, কাপাসিয়া, গাজীপুর।