জন্মদাতা পিতাকে রাস্তায় ফেলে গেলেন পাষণ্ড মেয়ে
গাজীপুর টাইমসঃ সৃষ্টিকর্তার দেওয়া সবচেয়ে বড় উপহারটা হচ্ছে বাবা। নিজেকে দুঃখ, বেদনা, হতাশা ও কষ্টের মধ্যে রেখেও যে নিরন্তর সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা চালিয়ে যায় সেই মানুষটার নাম হলো বাবা।
মূলত বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক অবর্ণনীয়। বাবা- মা হলো মায়া, ভালোবাসা, আবেগ, ত্যাগ, বন্ধুত্ব ও নির্ভরযোগ্য আশ্রয়।
যে সন্তানের সুখের জন্য সারাজীবন নিজের সুখ, আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছেন, যে সন্তানদেরকে নিজের কষ্টার্জিত উপার্জন দিয়ে বুকে আগলে রেখেছিলেন, অভাব, অনটন, কষ্ট বুঝতে দেননি সেই সন্তানরাই কি না নিজের জন্মদাতা পিতাকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে চলে গেলেন।
এমনই হৃদয়বিদারক ও অমানবিক ঘটনা ঘটেছে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানাধীন হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মসজিদ মার্কেটের পাশে।
গত ২ ডিসেম্বর সোমবার রাতের কোন এক সময় অসুস্থ বৃদ্ধ পিতাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যান তার মেয়ে ও মেয়ের জামাই। সেদিন রাতেই রাস্তার পাশে অসুস্থ অবস্থায় ওই বৃদ্ধ পিতাকে দেখে থানায় অবগত করেন গাজীপুর সদর উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তিন দিন পর গত ৪ ডিসেম্বর রাতে জয়দেবপুর থানা পুলিশ এর তত্বাবধানে ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়।
গাজীপুর সদর উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সুজন শেখ জানান, ২ তারিখ রাতে হঠাৎ শুনতে পাই হোতাপাড়ার মসজিদ মার্কেটের পাশে এক বৃদ্ধকে কে বা কারা যেন ফেলে রেখে গেছে। খবর শুনে তাৎক্ষনিকভাবে আমি, সজল ভাই, রবিউল ভাই সহ আরও অনেকেই বৃদ্ধ লোকটির কাছে যাই। শীতের রাতে পাতলা একটি কম্বল নিয়ে শুয়ে ছিলেন বৃদ্ধ লোকটি। ইউরিন ইনফেকশন থাকার কারণে পাইপ লাগানো ছিলো প্রস্রাবের রাস্তায়।
তিনি আরও জানান, বৃদ্ধ লোকটির সাথে কথা বলে আমরা তার পরিচয় ও মূল ঘটনা জানতে পেরেছি। লোকটির নাম মোঃ সাকিব আলী (পিতা মৃত আব্দুর রশিদ)। বয়স ৬৫ বছর। তিনি পেশায় একজন গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন। ৩ সন্তানের জনক তিনি। বড় ছেলে মহসিন জাহিদ পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চাকরি করেন।
অসুস্থ হওয়ার পর থেকে বড় মেয়ে রুবির সাথে থাকতেন তিনি। গত ১ মাস আগে জমি-জমা নিজ সন্তানদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেন। জমি-জমা নেওয়ার পর এক মাসও অতিবাহিত হয়নি। এরমধ্যেই মেয়ে ও মেয়ের জামাই গত ২ ডিসেম্বর গাজীপুরের সদর উপজেলার মনিপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে তাকে রাখার জন্য এসেছিলেন। কিন্তু বৃদ্ধ লোকটি অসুস্থ হওয়ায় বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ তাকে রাখতে অস্বীকৃতি জানায়। তাই হোতাপাড়ার মসজিদ মার্কেটে নিজের জন্মদাতা পিতাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চম্পট দেন পাষণ্ড মেয়ে।
বৃদ্ধ লোকটি তিনদিন এই তীব্র শীতে সামান্য একটি কম্বল গায়ে দিয়ে রাস্তার পাশে শুয়ে ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা সকাল বিকাল পাশের রেস্টুরেন্ট থেকে খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। গত ৪ তারিখ রাতে জয়দেবপুর থানার হস্তক্ষেপে বৃদ্ধকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
এ বিষয়ে জয়দেবপুর থানা পুলিশ জানান, খবর শুনে ঘটনাস্থল থেকে ওই বৃদ্ধ পিতাকে পুলিশ উদ্ধার করে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে। সার্বিকভাবে জয়দেবপুর থানা পুলিশ তার খোঁজ-খবর রাখছেন। প্রাথমিকভাবে তার পরিচয় জানা গেছে। তার গ্রামের বাড়ির লোকজনকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে বলেও জানান থানা পুলিশ।
আসিফ হোসাইন
বার্তা প্রধান, গাজীপুর টাইমস।